জীবপ্রযুক্তি আধুনিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা কৃষি, চিকিৎসা ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিপ্লব এনেছে। এই অধ্যায়ে আমরা টিস্যু কালচার, ইনসুলিন উৎপাদন এবং রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. টিস্যু কালচার ও তার ধাপসমূহ
টিস্যু কালচার হলো একটি প্রযুক্তি যেখানে উদ্ভিদ বা প্রাণীর কোষ, টিস্যু বা অঙ্গকে কৃত্রিম পরিবেশে বৃদ্ধি করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে অনেক গাছ বা প্রাণী উৎপাদন করা সম্ভব। টিস্যু কালচারের প্রধান ধাপগুলো হলো:
- এক্সপ্লান্ট নির্বাচন: প্রথমে একটি সুস্থ ও রোগমুক্ত উদ্ভিদ থেকে টিস্যু নেওয়া হয়, যাকে এক্সপ্লান্ট বলে।
- স্টেরিলাইজেশন: টিস্যুকে জীবাণুমুক্ত করা।
- কালচার মিডিয়াম প্রস্তুতি: পুষ্টিকর মিডিয়ামে টিস্যু রাখা।
- ইনকিউবেশন: নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বৃদ্ধি করা।
- সাবকালচারিং: বৃদ্ধিপ্রাপ্ত টিস্যুকে নতুন মিডিয়ামে স্থানান্তর।
- রুটিং ও শুটিং: শিকড় ও কান্ড গঠনের জন্য হরমোন ব্যবহার করা।
- এককালচারিং: শেষে, টিস্যু কালচারে উৎপাদিত গাছগুলোকে মাটিতে স্থানান্তর করা হয় যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
২. ইনসুলিন উৎপাদন প্রক্রিয়া
ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইনসুলিন উৎপাদনের ধাপগুলো হলো:
- জিন ক্লোনিং: প্রথমে মানুষের ইনসুলিন জিনকে আলাদা করা হয় এবং প্লাজমিড ডিএনএ-তে প্রবেশ করানো হয়।
- ট্রান্সফরমেশন: এই প্লাজমিডকে ব্যাকটেরিয়া (যেমন E. coli) বা ইস্টের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়।
- ফার্মেন্টেশন: ট্রান্সফর্মড ব্যাকটেরিয়া বা ইস্টকে ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হয়। এই সময় তারা ইনসুলিন উৎপাদন করে।
- ইনসুলিন আলাদা করা: ফার্মেন্টেশন শেষে, ইনসুলিনকে ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট থেকে আলাদা করা হয়।
- শুদ্ধিকরণ: ইনসুলিনকে শুদ্ধ করে মানুষের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
৩. টিস্যু কালচারের গুরুত্ব
- দ্রুত গুণগত মানের গাছ উৎপাদন।
- রোগমুক্ত গাছ উৎপাদন।
- বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ।
- জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রয়োগ।
৪. রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তির গুরুত্ব
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইনসুলিন ও ভ্যাকসিন উৎপাদন।
- উচ্চ ফলনশীল ফসল তৈরি।
- জিন থেরাপির মাধ্যমে জিনগত রোগের চিকিৎসা।
- গবেষণা ও উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন।
Suggestion for MCQ, CQ
উত্তর:
টিস্যু কালচার হলো একটি প্রযুক্তি যেখানে উদ্ভিদ বা প্রাণীর কোষ, টিস্যু বা অঙ্গকে কৃত্রিম পরিবেশে বৃদ্ধি করা হয়। এর ধাপগুলো হলো:
- এক্সপ্লান্ট নির্বাচন: সুস্থ উদ্ভিদ বা প্রাণী থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা।
- স্টেরিলাইজেশন: টিস্যুকে জীবাণুমুক্ত করা।
- কালচার মিডিয়াম প্রস্তুতি: পুষ্টিকর মিডিয়ামে টিস্যু রাখা।
- ইনকিউবেশন: নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে টিস্যুর বৃদ্ধি করা।
- সাবকালচারিং: বৃদ্ধিপ্রাপ্ত টিস্যুকে নতুন মিডিয়ামে স্থানান্তর করা।
- রুটিং ও শুটিং: শিকড় ও কান্ড গঠনের জন্য হরমোন ব্যবহার করা।
- এককালচারিং: গাছগুলোকে মাটিতে স্থানান্তর করা।
উত্তর:
ইনসুলিন উৎপাদনে রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তির ধাপগুলো হলো:
- জিন ক্লোনিং: মানুষের ইনসুলিন জিনকে আলাদা করা এবং প্লাজমিড ডিএনএ-তে প্রবেশ করানো।
- ট্রান্সফরমেশন: প্লাজমিডকে ব্যাকটেরিয়া বা ইস্টের মধ্যে প্রবেশ করানো।
- ফার্মেন্টেশন: ট্রান্সফর্মড ব্যাকটেরিয়া বা ইস্টকে ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা।
- ইনসুলিন আলাদা করা: ফার্মেন্টেশন শেষে ইনসুলিনকে ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট থেকে আলাদা করা।
- শুদ্ধিকরণ: ইনসুলিনকে শুদ্ধ করে মানুষের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা।
উত্তর:
টিস্যু কালচারের গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- দ্রুত গুণগত মানের গাছ উৎপাদন: অল্প সময়ে অনেক গাছ উৎপাদন করা যায়।
- রোগমুক্ত গাছ উৎপাদন: সুস্থ টিস্যু ব্যবহার করে রোগমুক্ত গাছ তৈরি করা যায়।
- বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণ: বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ করা সম্ভব।
- জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং: নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গাছ তৈরি করা যায়।
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগ: ত্বক, হাড় এবং অন্যান্য টিস্যু তৈরি করা সম্ভব।
উত্তর:
রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তির গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগ: ইনসুলিন, ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য ওষুধ উৎপাদন।
- কৃষি উন্নয়ন: উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং পোকামাকড় সহনশীল ফসল তৈরি।
- জৈবপ্রযুক্তি: শিল্প ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োগ।
- জিন থেরাপি: জিনগত রোগের চিকিৎসা করা।
- গবেষণা ও উন্নয়ন: জেনেটিক গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন।
উত্তর:
| বিষয় | টিস্যু কালচার | রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তি |
|---|---|---|
| সংজ্ঞা | কোষ, টিস্যু বা অঙ্গকে কৃত্রিম পরিবেশে বৃদ্ধি করা। | দুটি ভিন্ন প্রজাতির ডিএনএকে একত্রিত করে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব তৈরি। |
| প্রয়োগ ক্ষেত্র | কৃষি, চিকিৎসা, গবেষণা। | চিকিৎসা, কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, গবেষণা। |
| উদাহরণ | গোলাপ গাছের টিস্যু কালচার। | ইনসুলিন উৎপাদন, উচ্চ ফলনশীল ফসল তৈরি। |
| প্রক্রিয়া | টিস্যু সংগ্রহ, কালচার মিডিয়ামে বৃদ্ধি। | জিন ক্লোনিং, ট্রান্সফরমেশন, ফার্মেন্টেশন। |
উত্তর:
রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল ফসল তৈরি করার প্রক্রিয়া হলো:
- জিন নির্বাচন: উচ্চ ফলনশীলতা, রোগ প্রতিরোধ বা পোকামাকড় সহনশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় জিন নির্বাচন করা।
- জিন ক্লোনিং: নির্বাচিত জিনকে প্লাজমিড ডিএনএ-তে প্রবেশ করানো।
- ট্রান্সফরমেশন: প্লাজমিডকে উদ্ভিদের কোষে প্রবেশ করানো।
- ফসল উৎপাদন: ট্রান্সফর্মড কোষ থেকে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করা এবং তা মাঠে চাষ করা।
এই প্রক্রিয়ায় উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং পোকামাকড় সহনশীল ফসল তৈরি করা সম্ভব।
- a) প্লাজমিড
- b) এক্সপ্লান্ট
- c) ভেক্টর
- d) ক্লোন
- a) ভাইরাস
- b) ব্যাকটেরিয়া
- c) ছত্রাক
- d) প্রোটোজোয়া
- a) দ্রুত গাছ উৎপাদন
- b) রোগমুক্ত গাছ উৎপাদন
- c) নতুন প্রজাতি তৈরি
- d) বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণ
- a) লাইগেজ
- b) পলিমারেজ
- c) রেস্ট্রিকশন এনজাইম
- d) হাইড্রোলেজ
- a) অক্সিন
- b) জিব্বেরেলিন
- c) সাইটোকাইনিন
- d) ইথিলিন
- a) ফার্মেন্টেশন
- b) পাতন
- c) স্ফটিকীকরণ
- d) পাতন ও স্ফটিকীকরণ
- a) নতুন প্রজাতি তৈরি
- b) দ্রুত গাছ উৎপাদন
- c) রোগমুক্ত গাছ উৎপাদন
- d) b ও c উভয়ই
- a) ইনসুলিন
- b) ভ্যাকসিন
- c) প্লাস্টিক
- d) উচ্চ ফলনশীল ফসল
- a) এক্সপ্লান্ট নির্বাচন
- b) সাবকালচারিং
- c) ইনকিউবেশন
- d) স্টেরিলাইজেশন
- a) প্লাজমিড
- b) ক্রোমোজোম
- c) রাইবোজোম
- d) মাইটোকন্ড্রিয়া
- a) দ্রুত গাছ উৎপাদন
- b) নতুন প্রজাতি তৈরি
- c) রোগমুক্ত গাছ উৎপাদন
- d) বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণ
- a) ভাইরাস
- b) ব্যাকটেরিয়া
- c) ছত্রাক
- d) প্রোটোজোয়া
- a) লাইগেজ
- b) পলিমারেজ
- c) রেস্ট্রিকশন এনজাইম
- d) হেলিকেজ
- a) অক্সিন
- b) জিব্বেরেলিন
- c) সাইটোকাইনিন
- d) ইথিলিন
- a) ইনসুলিন
- b) ভ্যাকসিন
- c) উচ্চ ফলনশীল ফসল
- d) সবগুলো
- a) টিস্যুকে জীবাণুমুক্ত করা
- b) টিস্যুর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা
- c) টিস্যুকে নতুন মিডিয়ামে স্থানান্তর করা
- d) টিস্যুকে মাটিতে স্থানান্তর করা
- a) লাইগেজ
- b) পলিমারেজ
- c) রেস্ট্রিকশন এনজাইম
- d) হেলিকেজ
- a) নতুন প্রজাতি তৈরি
- b) দ্রুত গাছ উৎপাদন
- c) রোগমুক্ত গাছ উৎপাদন
- d) b ও c উভয়ই
Copyright
Biggan Tube